পণ্য পরিবহণঃ পরিবর্তনের শুরু এবং আমাদের করণীয়

বাংলাদেশে ট্রাক ইন্ডাস্ট্রি থেকে যে লজিস্টিক সুবিধাদি একসময় আমরা পেতাম তাতে ছিল নানা  অনিয়ম ও নৈরাজ্য। একধরণের অস্থিতিশীলতা ও অরাজকতার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল ট্রাক ইন্ডাস্ট্রির পুরো ব্যবসাটাই। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্বে নাভিশ্বাস উঠেছিল ট্রাক মালিক, ড্রাইভার ও সর্বোপরি শিপারদের।  বিশেষ করে ট্রাক মালিক ও ড্রাইভাররা এই দালালদের খপ্পরে পড়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হতো। একেকটি ট্রিপে ড্রাইভাররা যে ভাড়া পেতো তার বড় অংশই চলে যেতো দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগীর দখলে। ওদিকে শিপাররাও ট্রাক ভাড়া করতে এসে চাঁদাবাজি সহ নানা হয়রানির শিকার হতো।

 

কিন্তু সময় এখন অনেকটাই পাল্টে গেছে। প্রযুক্তিগত ও ডিজিটাল সুযোগ-সুবিধা নিয়ে এই পুরো ইন্ডাস্ট্রি আলাদা এক রূপরেখায় এসে দাঁড়িয়েছে। আসছে যুগান্তকারী সব পরিবর্তন। আর এর পিছনে কাজ করে চলেছে অনলাইন ও অ্যাপভিত্তিক প্ল্যাটফর্মগুলো। এই প্ল্যাটফর্মগুলো এককথায় নিত্যনতুন সব পরিবর্তন নিয়ে আসছে এই ইন্ডাস্ট্রিতে।  উদাহরণস্বরূপ বলা যায় অনলাইন ও অ্যাপভিত্তিক মাধ্যম ‘ট্রাক লাগবে’র কথা। এই অ্যাপভিত্তিক মাধ্যমটি দিয়ে খুব সহজেই ট্রাক ভাড়া করা যায় এবং ট্রিপ পাওয়া যায়। শিপার তার অ্যান্ড্রয়েড ফোন ব্যবহার করে এই অ্যাপের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ট্রাকটি ভাড়া করতে পারছেন। আর ট্রাক মালিক ও ড্রাইভাররা এই অ্যাপে প্রতিদিনই পাচ্ছেন অসংখ্য ট্রিপ। এককথায় শিপার ও ড্রাইভারদের মধ্যে একধরণের সংযোগ সৃষ্টি করেছে এই অ্যাপ। যার মাধ্যমে দুই পক্ষই সমানভাবে লাভবান হচ্ছেন। একইসাথে এই মাধ্যমগুলোতে যে টাকা পয়সার আদানপ্রদান হয় তার মধ্যেও থাকে স্বচ্ছতা। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের কোন জায়গা নেই আর।

 

পরিবর্তনের এই হাওয়ায় ট্রাক ড্রাইভারদের জীবনেও আসছে। এখন আগের থেকে অনেক বেশি ট্রিপ পাচ্ছেন ট্রাক ড্রাইভাররা। ফলে তাদের আয় উপার্জন যেমন বাড়ছে তেমনি সামগ্রিকভাবে জীবনমানেও পরিবর্তন আসছে।

 

এই ডিজিটাল বিপ্লব বা পরিবর্তন আমাদেরকে একইসাথে কিছু বিষয়ে সতর্ক ও সাবধানীও হতে বলে। একথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলো তাদের কাজ বেশিদিন হয়নি শুরু করেছে। তাই তাদেরকে অবশ্যই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন হতে হবে। ডিজিটাল ও প্রযুক্তিগত পরিবর্তনগুলোর সাথে আপডেট হওয়া ও প্রতিনিয়ত উন্নতি করার তাগিদ থাকা এক্ষেত্রে আবশ্যক। সাথেসাথে শিপার, ড্রাইভার ও অনলাইন বা অ্যাপভিত্তিক এই মাধ্যমগুলো যেনো একসুত্রে আরও সহজে কাজ করতে পারে সে বিষয়েও উদ্যোগী হতে হবে। এই সেক্টরে কাজ করা সবারই উচিত হবে সম্পদ ও সামর্থ্যের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করা। আর তাহলেই এই পরিবর্তনের আবহ স্থায়ী হবে এবং আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবো।

Back to top