ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশন কতখানি গুরুত্বপূর্ণ?

বিশ্বব্যাপী, করোনাভাইরাস মহামারীর প্রভাব একটি বিশাল আর্থিক সঙ্কট সৃষ্টি করেছে যার ফলস্বরুপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎপাদন বন্ধ, চাহিদা ও সরবরাহের ক্ষেত্রে একটি পতন এবং অবাঞ্ছিত পদক্ষেপ ও শেয়ার বাজারগুলির ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির প্রতি নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। পর্যটন এবং পরিবহনের মতো কিছু শিল্প ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার প্রভাব এখনও কমে নি। এই অবস্থায় সারা বিশ্বের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের প্রতিষ্ঠান সমূহও এর ব্যতিক্রম নয়।

যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান সঞ্চালক হিসেবে কাজ করে সে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলি। বাংলাদেশের জিডিপির ২৫% আর সামগ্রিক উৎপাদন ব্যবস্থার প্রায় ৯০ শতাংশ আসে এসএমই প্রতিষ্ঠানসমূহ থেকে। দেশের অর্থনীতিতে যেখানে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলির অবদান পরিষ্কার ভাবেই উল্লেখিত পরিসংখ্যান থেকে পরিলক্ষিত হচ্ছে সেখানে করোনাকালীন এবং তার পরবর্তী সময়ে এসএমই প্রতিষ্ঠানগুলিই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে আসছে। করোনাকালীন সময়ের শুরুর দিকে ২০২০ সালের মাঝামাঝিতেই শুধু এই ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫৬ লক্ষ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর জন্য ৪৯,৫০০ কোটি টাকা। 

এই এসএমই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসমূহ খুচরা এবং পাইকারী মালামাল পাঠিয়ে থাকে দেশের বিভিন্ন স্থানে, যে কারনে নিয়মিত ট্রাক বা পিকআপের প্রয়োজন হয়। বর্তমানের এই অস্থিতিশীল ব্যবসায়িক পরিবেশে প্রথাগত পরিবহন ব্যবস্থা এ ধরনের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য হয়ে উঠেছে আরো সমস্যার কারন। চলুন জেনে নেই পরিবহণ ব্যবস্থায় প্রধান যে সমস্যা গুলির সম্মুখীন হতে হচ্ছে ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের প্রতিষ্ঠানগুলোকে-

 

কমিটমেন্টের অভাব 

আমাদের দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের প্রতিষ্ঠানসমূহ পরিবহণ ব্যবস্থায় অনেক সময় সমস্যায় পরেন ট্রাক মালিক বা ড্রাইভারের কমিটমেন্টের অভাবে, সাধারণত তারা আশেপাশের ট্রাক স্ট্যান্ড অথবা পরিচিত মাধ্যম থেকেই ট্রাক বা পিকআপ ভাড়া করে থাকেন। কিছু ক্ষেত্রে শেষ মূহুর্তে গিয়ে, আগে থেকে ঠিক করা ট্রাক বা পিকআপ মালিক পিকআপ দিতে পারছেন না। সেই সময়ে দ্রুত পিকআপ খুঁজে পাওয়াও মুশকিল। এ ধরনের সমস্যার কারণে পণ্য কাস্টোমারের কাছে সঠিক সময়ে পৌছে দেওয়া সম্ভব হয় না।

 

পণ্য পৌছাতে দেরী 

এসএমইগুলো বর্তমানে কমন যেই সমস্যার সম্মুখীন হন তার মধ্যে একটি হল পণ্য আনলোড পয়েন্টে দেরীতে পৌছানো, পিকআপ খালি থাকলে ড্রাইভারগণ অপেক্ষা করেন অন্য কোনো মালামাল নেওয়ার বা প্রফেশনাল না হওয়ায় অনেক সময় তারা সঠিক সময়ে পণ্য পৌছানোর গুরুত্ব বুঝেন না এই সকল কারনে পণ্য লোড এবং আনলোড উভয় ক্ষেত্রেই দেরী হয়।

 

বেশি ভাড়া

সাধারণত এসএমইগুলো তাদের আশে পাশের  পরিচিত ট্রাক মালিকের নিকট থেকে ট্রাক বা পিকআপ ভাড়া করেন, তবে অনেকক্ষেত্রেই ভাড়া করতে হয় মধ্যসত্ত্বভোগীর মাধ্যমে যার কারণে গুণতে হয় অতিরিক্ত ভাড়া, এছাড়াও এক মাধ্যম থেকে ভাড়া করায়, বেশি দূরুত্বের জন্য ট্রাক ভাড়া করলে মার্কেট রেট সম্পর্কে ধারণা না থাকায় ভাড়া বেশি পড়ে।  আর অনেক সময় হঠাৎ করে ভাড়ার রেট বৃদ্ধি করা, ট্রাক ড্রাইভারদের বখশিশ দাবী করা ইত্যাদি সমস্যা তো আছেই।

 

পণ্য হারানোর সম্ভাবনা

বেশিরভাগ এসএমই তাদের পরিচিত ট্রাক ড্রাইভার, যারা অনেক আগে থেকেই তাদের পণ্য পরিবহণ করছেন তাদের পিকআপ বা ট্রাকে পণ্য পাঠিয়ে থাকেন। কিন্তু অনেক সময়ই এমন হয় যে, পরিচিত পিকআপ ড্রাইভার এভেইলেবল থাকেন না, তখন কিন্তু তাদের বাইরে থেকেই পিকআপ ভাড়া করতে হয় আর এক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল পণ্য হারানোর সম্ভাবনা নিয়ে। আর অপরিচিত হওয়ায় পণ্য খুঁজে পাওয়ার কোনো সুযোগও থাকে না। 

 

বাংলাদেশের পরিবহণ ব্যবস্থায় এ ধরনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এসএমই গুলোর জন্য তাদের ব্যবসা পরিচালনা করে তোলে আরো জটিল, তাই “ট্রাক লাগবে”, অ্যাপের মাধ্যমে এ ধরনের পরিবহণ সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান করতে কাজ করে চলেছে। অ্যাপের মাধ্যমে লোডপয়েন্টের সবচেয়ে কাছের ট্রাক বা পিকআপ মূহুর্তেই পণ্য প্রেরকের পাঠানো রিকুয়েস্ট গ্রহণ করে এবং ড্রাইভারগণ প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হওয়ায় গতানুগতিক ট্রাক ভাড়ায় যেই সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় তা অনেকাংশেই সমাধান করা সম্ভব হয়েছে।

 

এস ওয়াই নেটওয়ার্ক সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেড এর কর্ণধার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান দেশের বিভিন্ন স্থানে মালামাল পাঠাতে এখন নিয়মিত ‘ট্রাক লাগবে’ অ্যাপ ব্যবহার করছেন। কি ধরনের সুবিধার কারনে তিনি নিয়মিত ‘ট্রাক লাগবে’ অ্যাপ ব্যবহার করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন- 

 “একবার এয়ারপোর্ট থেকে লোকাল পিকআপে মালামাল নিয়ে আসার সময় আমার কিছু ইলেকট্রনিক্স মালামাল হারিয়ে যায়, এরপর থেকে ট্রাক লাগবে অ্যাপ থেকে পিকআপ ভাড়া করি আমি। ট্রাক লাগবে’র কাছে পিকআপ মালিকের সব ইনফরমেশন থাকায় মালামাল হারানো নিয়ে কোনো চিন্তা থাকে না আর মালামালের সাথে কাউকে দেওয়ার ঝামেলাও নেই।  এড্রেস বলে দেই, তারপর জায়গা মত এসে আমাকে কল দেয় ড্রাইভার। মোট কথা এই সিস্টেমটা আমার কাছে ঝামেলাহীন আর নিরাপদ মনে হয়।”   

 

প্রথাগত পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তন ছাড়া এই শিল্পকে আগের তুলনায় শক্তিশালী করে তোলা মোটেই সম্ভব না। আর দেশের পরিবহন ব্যবস্থার ডিজিটালাইজেশনই এই পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে যা আমাদের ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহকে করে তুলবে আরো বেশি শক্তিশালী। 

Back to top