পদ্মা সেতু হচ্ছে বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর একটি বহুমুখী সড়ক-রেল সেতু। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সেতু যেটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলকে যেমন মাওয়া, লৌহজং, মুন্সীগঞ্জকে দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চলে অর্থাৎ জাঞ্জিরা, শরীয়তপুরের সাথে সংযুক্ত করে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রতিকূলতার কারনে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের দুই অঞ্চলের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা ছিল। তাই এই পদ্মা সেতু জীবনযাত্রা সহজ করে কল্যাণ বয়ে আনবে উভয় অঞ্চলের জন্য। পদ্মা সেতু শুধু দেশের একটি বড় নির্মাণ বা ব্যবসায়িক পরিকল্পনাই নয়, বরং এটি দেশের দুটি অঞ্চলের পরিবার, সংস্কৃতি এবং অন্যান্য জিনিসকে সংযুক্ত করে। এছাড়াও দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে তাৎপর্যপূর্ণ ভুমিকা পালন করবে পদ্মা সেতু। এছাড়া সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনও হবে তাৎপর্যপূর্ণ। নিম্নে পদ্মা সেতুর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হল:
৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ১৮.১৮ মিটার প্রস্থের এই সেতুর মোট স্প্যান ৪১টি এবং প্রতিটি স্প্যান ১৫০ মিটার লম্বা। সেতুর মোট পাইল ২৮৬ যেখানে ২৬২ পাইল স্টিল এবং ২৪ পাইল কংক্রিট দ্বারা তৈরি করা হয়েছে। পদ্মা সেতু দেশের দীর্ঘতম কারণ সেতুটির মোট দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার।
সেতুটি দেশের সেতুটি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোকে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সাথে উত্তর ও পূর্বাঞ্চলের সাথে সংযুক্ত করেছে। এটি রাজধানী ঢাকার দক্ষিণ দিকে অবস্থিত মুন্সীগঞ্জ জেলাকে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার সাথে সংযুক্ত করেছে।পদ্মা সেতু এই দুই অঞ্চলসহ সার্বিকভাবে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
সুদূর ভবিষ্যতে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি কয়েকগুন বাড়াতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব থাকবে পদ্মা সেতুর। অনুমান করা হয় যে জাতীয় জিডিপিতে দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের দিকে ১.৭% এবং দেশব্যাপী ০.৫৬% বৃদ্ধি পাবে। পদ্মা সেতুর জন্য নির্মাণে ২৯%, কৃষিখাতে ৯.৫%, উৎপাদন ও পরিবহনে ৮% বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও পদ্মা ব্রিজের জন্য দক্ষিনাঞ্চলে দরিদ্রতা হ্রাস পাবে ১%, জাতীয়ভাবে ০.৮%। এই সেতুটি মোট শ্রমশক্তির ১.২% এর জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে বলেও আশা করা হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের মধ্যে ভ্রমণের সময়ও এক চতুর্থাংশ হ্রাস পাবে কারণ পর্যটন বৃদ্ধি পাবে।
পদ্মা সেতু দেশের দুই অঞ্চলকে সংযুক্ত করেছে। সেতু ব্যবহার করতে পারবে এমন যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, এর ফলে ব্যবসায়িক পণ্য আরও সহজে ও দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তর করা যাবে। এর ফলে পরিবহন ব্যবস্থা অনেক উন্নত হবে। ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান এবং কার্গো ভ্যানের মতো যানবাহনগুলি প্রচুর পণ্য পরিবহন করতে পারে বলে মানুষের দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো দ্রুত মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলগুলি আরও একীভূত হওয়ার সাথে সাথে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য জায়গাগুলোও উন্নত হবে। সব মিলিয়ে পদ্মা সেতু দেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, যা হাজার হাজার মানুষের জীবনযাত্রার মানকে উন্নত করবে।
পদ্মা সেতুটি ব্যবহার করার জন্য আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হবে। পদ্মা ব্রিজের টোলের তালিকা নিচে দেয়া হলঃ
| মোটরসাইকেল | ১০০ টাকা |
| গাড়ি/জীপ | ৭৫০ টাকা |
| পিকাআপ | ১২০০ টাকা |
| মাইক্রোবাস | ১৩০০ টাকা |
| মিনিবাস | ১৪০০ টাকা |
| মাঝারি বাস | ২০০০ টাকা |
| বড় বাস | ২৪০০ টাকা |
| ট্রাক (৫ টন পর্যন্ত) | ১৬০০ টাকা |
| ট্রাক (৫-৮ টন) | ২১০০ টাকা |
| ট্রাক (৩ এক্সেল) | ৫৫০০ টাকা |
| ট্রেলার (৪ এক্সেল) | ৬০০০ টাকা |
| ট্রেলার (৪ এক্সেলের উপরে) | টাকা ৬০০০+ |
সেতুটি দিয়ে যাতায়াতের সময় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত মানুষ বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা পাবে। সুবিধাগুলোর তালিকা নীচে দেওয়া হল:
জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর গবেষণা অনুসারে ২০২২ সালের মধ্যে, প্রতিদিন ২৪,০০০ যানবাহন পদ্মা সেতু অতিক্রম করবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং ২০৫০ সালের মধ্যে ৬৭,০০০টিরও বেশি যানবাহন চলাচল করবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সেতুটি প্রতিদিন প্রায় ৬,৮১,৬০০ লিটার জ্বালানী সাশ্রয় করবে।