ট্রাকের ইঞ্জিন হচ্ছে মানবদেহের হার্টের মত,ঠিকমত না চললে সব বন্ধ। ইঞ্জিনের ভেতরে রয়েছে অসংখ্য কলকব্জা যার একটি দূর্বল হলে ইঞ্জিনের শক্তি কমতে থাকে। এই কলকব্জাগুলো সবসময় নড়াচড়ার মধ্যেই থাকে এবং এই কাজটি যে ট্রাকের ইঞ্জিনে ভাল হয় সেই ট্রাকের মালিকের ভাল লাভ হয়। লাভের কথা বলছি কারন কমার্শিয়াল ট্রাক যারা পরিচালনা করেন তারা আশা করেন ট্রাকটি যেন ভালো সার্ভিস দেয়, পণ্য যেন ঝামেলাবিহীনভাবে পৌছায় । তাতে আয় ভাল হয় এবং ট্রাকের কিস্তি সময়মত ব্যাংকে যায় । সবকিছুই সম্ভব যদি ইঞ্জিন ঠিক থাকে। এত কথা বলার কারন হল ইঞ্জিন ওয়েল এই বিষয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে।
ইঞ্জিন অয়েলের কাজ হলো ইঞ্জিনের ভেতর যে কলকব্জা আছে সেগুলোকে পিচ্ছিল রাখা যেন সহজে নড়াচড়া করতে পারে এবং ক্ষয় কম হয়। এর আরেকটি কাজ হল ইঞ্জিনকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করা। এছাড়া ইঞ্জিনের চেম্বারের ভেতরে ময়লা জমলে ইঞ্জিন অয়েল সেটা পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। তাই ওয়ার্কশপের মেকেনিকের ভাষায় “মবিল” ডাউন দিলে যা বের হয় ইঞ্জিন থেকে তা দেখতে হয় ঘন,কালো আর ময়লা। ইঞ্জিন অয়েলেকে আমরা মোটর অয়েল বা ইঞ্জিন লুব্রিকেন্ট বলেও ডাকতে পারি, আর মবিল বললে আমজানতার মধ্যে কোন সংশয় থাকেনা। ইঞ্জিন নিয়ে যারা কাজ করে তাদের কাছে এই নামেই পরিচিত, যদিও মবিল নিজেই একটি বিখ্যাত লুব্রিকেন্ট কোম্পানি।
এই প্রশ্নের উত্তর খুবই সহজ কারন আপনি জানেন। যখন কিনেছেন তখন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আপনাকে বলে দিয়েছে কি করতে হবে। ট্রাকের ড্যাস বোর্ডে স্পিড মিটারের পাশেই মাইল মিটার থাকে । সেখানে আপনার ট্রাক কত মাইল বা কিলোমিটার চলেছে আপনি দেখতে পাবেন। কোম্পানির বেধে দেয়া নির্দিস্ট দূরত্ব পার হলে আপনাকে ইঞ্জিন ওয়েল বদলে ফেলতে হবে। এ কথাতো সবাই জানে কিন্তু অনেকে জানেনা বা বুঝতে পারেনা যে গাড়ীর যত বয়স বাড়ে ততো গাড়ীর ইঞ্জিনে ক্ষয় হয় এবং ইঞ্জিন অয়েল এই ক্ষয় কমালেও আর আগের মত পারফর্ম করবেনা। তাই নতুন অবস্থায় যে মাইলেজ সে দিবে বুড়ো বয়সে সে এত মাইলেজ দিবেনা। আপনার ইঞ্জিন কিন্তু চলবে, একসময় ইঞ্জিন তার রক্ষাকারী ইঞ্জিন অয়েলকেই খেতে শুরু করবে । ফলাফল শুকনো ইঞ্জিন এবং কোন একদিন হার্ট ফেল করে ইঞ্জিনের মৃত্যু । সুতরাং জেনে নিন কত মাইল পর পর ইঞ্জিন অয়েল বদলাবেন এবং ইঞ্জিনের কন্ডিশন অনুযায়ী মাইলেজ পয়েন্ট সেট করে নিবেন।
সময়মত ইঞ্জিন অয়েল বদলালেন তো আপনি ট্রাকের লাইফ বাড়ালেন। কথা কিন্তু সহজ, ইঞ্জিন ভালো থাকা মানে দামী কোন রিপেয়ার করা লাগছেনা। খরচ কমল। আপনি কখনোই চাইবেন না আপনার ট্রাক রাস্তায় না থেকে গ্যারেজেই পড়ে থাকুক। ওহ! আরেকটি কথা, ইঞ্জিন অয়েল কবে বদলেছেন মনে করতে পারছেন না ? দ্রুত বদলে ফেলুন। সময় হয়ে গিয়েছে।
ইঞ্জিন অয়েল বা লুব্রিকেন্ট বদলানোর সময় হওয়ার পরও যদি দেরী করেন তাহলে আপনি ইঞ্জিনের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করতে শুরু করলেন। যতদিন যাবে ততো অয়েল তার গুনাগুন হারাবে, ঘর্ষন বেড়ে যাবে এবং পার্টস এর ক্ষয় বহুগুণে বেড়ে যাবে । এই অবস্থায় যখন ট্রাক নস্ট হয় তখন পকেট থেকে মোটা অংকের টাকা বেরিয়ে যায় আর ইঞ্জিন যদি সীজ করে তাহলে তো কথাই নেই তখন গ্যারেজে কাঁথা- বালিশ নিয়ে পড়ে থাকতে হবে। এমন বহু ট্রাক মালিক কে হা-পিত্যেশ করতে দেখা যায় প্রায়ই। আশা করি আপনি সেই দলের নন।
ট্রাক ড্রাইভারদের মুখে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায় যে ট্রাকের মবিল কমে গেছে, এটা একটা সাভাবিক ঘটনা যা বেশি হয় পুরনো ট্রাকের ক্ষেত্রে। ট্রাক যত বেশি চলবে ততো অয়েল পুড়বে তাই ইঞ্জিন অয়েলের পরিমান ধীরে ধীরে কমতে থাকে। এই কমে যাওয়ার একটা নির্দিস্ট সীমা আছে যার নিচে চলে গেলে ইঞ্জিন ডেঞ্জার জোনে চলে যায়। ডেঞ্জার মানে যা তা ডেঞ্জার না পুরো ইঞ্জিন বাতিল, ধোলাইখালে কেজি দরেও কেউ কিনবেনা।
যারা অভিজ্ঞ এবং ভালো চালক অথবা ট্রাক মালিক তারা নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল চেক করেন। এটাও কোন কস্টসাধ্য কাজ নয়। প্রতিটি ইঞ্জিনেই একটি স্টিক বা কাঠির মত থাকে যা দিয়ে অয়েল এর অবস্থা বোঝা যায়। তাই নির্দিস্ট মাপের নিচে নেমে গেলে বদলে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ অথবা ইঞ্জিন অয়েল যোগ করতে হবে। এসব পদক্ষেপ ঠিকমত গ্রহন করলে আপনার ট্রাকের মাইলেজ ঠিক থাকবে।
ভালো মানের ইঞ্জিন অয়েল এবং সময়মত পরিবর্তন যে আপনার জালানি তেল খরচে সাশ্রয় এনে দিতে পারে এই কথাটি আপনি হয়তো জানেন না। তাই একই দূরত্বে তেল খরচের তারতম্য হলে ট্রাক চালকের উপর রাগ করার সাথে সাথে ইঞ্জিনের দিকেও মনযোগ দেওয়া উচিত । ইঞ্জিন যখন ঠিকভাবে চলেনা তখন একই পরিমান শক্তি পেতে বেশি পরিমান তেল পোড়ায় তাই খরচ যায় বেড়ে। ইঞ্জিন অয়েল সময়মত পরিবর্তন করে তেল খরচ কমিয়ে লাভের পাল্লাটা ভারী করার সিদ্ধান্ত কিন্তু আপনার।
আপনার ট্রাক থেকে কালো ধোয়া বের হচ্ছে, আপনি চোখ বন্ধ করে দায় চাপিয়ে দিতে পারেন ইঞ্জিনের উপর অথবা ইঞ্জিন অয়েলের উপর। দুটি কারনে হতে পারে- ইঞ্জিনের রিং পিস্টন ক্ষয় হয়ে গেছে অথবা আপনি ভুল গ্রেডের অয়েল ঢেলেছেন । আপনি যখন ফিটনেস টেস্ট করাতে যাবেন তখন এই কালো ধোয়ার কারনে ফেল করে বসতে পারেন। নতুন সড়ক আইন ২০১৮ অনুযায়ী গাড়ীর ফিটনেস না থাকলে বা কালো ধোয়ার কারনে পরিবেশ ক্ষতি হচ্ছে বলে যে পরিমান জরিমানা করা হবে তাতে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ার চেয়ে ইঞ্জিন অয়েলের দিকে নজর রাখাই শ্রেয়। নিয়মিত ইঞ্জিন অয়েল বদলালে ট্রাক থেকে কালো ধোয়া কম বের হবে এবং বায়ু দূষন কমে যাবে।
আপনার ট্রাকের ইঞ্জিন অয়েল আশা করি সময়মত বদলে ফেলবেন। তাই এবার একটু অন্য কথা বলি, যেকোন ব্যবসায় অভিজ্ঞতা একটি গুরুত্বপুর্ণ বিষয় আর ট্রাক নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের আরো অনেক বিষয় লক্ষ্য রাখতে হয়। যেমন- ট্রাকের পেপারস ঠিক আছে কিনা, ট্রাক পার্কিং , ভাল ড্রাইভার-হেল্পার যোগাড় করা এবং সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হচ্ছে ট্রাকের ট্রিপের ব্যবস্থা। ট্রাক ঠিক আছে কিন্তু ট্রিপ নেই, বসে আছে স্ট্যান্ডে। আয়ের খাতা শুন্য।
আয়ের চাকা চলমান রাখতে যখন ট্রিপ নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় বেশি তখনই ট্রাকের যত্নের ব্যাপারে উদাসীনতা দেখা যায়। ট্রাকের চাকা ঘুরলেই পয়সা তাই যারা বুদ্ধিমান ব্যবসায়ী বা চালক তারা ট্রাক স্ট্যান্ড বা ট্রান্সপোর্টের ভরসায় না থেকে স্মার্ট ফোনের সঠিক ব্যবহার করতে পারেন। গুগল প্লেস্টোর থেকে ট্রাক লাগবে ওনার অ্যাপ ডাউনলোড করে আপনার ট্রাকটি রেজিস্ট্রেশন করে নিতে পারেন। আপনার ট্রাকের ধরনের সাথে মিলে যায়, এমন কোন ট্রিপ আসলে মোবাইলে নোটিফিকেশন আসতে থাকবে। দামে দরে মিলে গেলে পেয়ে যাবেন ট্রিপ। এক ট্রিপ শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি ট্রিপের সম্ভাব্য বুকিং নিয়ে নিতে পারেন। কোথাও বুঝতে অসুবিধা হলে কল সেন্টারে সরাসরি ফোন করে (কল সেন্টার নাম্বারঃ ০৯৬৩৮০০০২৪৫) সমাধান নিয়ে নিতে পারবেন। তো ট্রিপের চিন্তা উবে গেলে আপনিতো ভালো থাকবেনই ভালো থাকবে আপনার ট্রাকটিও।