সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮-এর যে ২০টি বিধান জানা জরুরী

বহুল আলোচিত সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮ এর বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করে দিয়েছে সরকার। এ উপলক্ষ্যে গত ২২ অক্টোবর ২০১৯ এই আইন কার্যকরের তারিখ ঘোষণা করে সরকারি গেজেট প্রকাশিত হয়। বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট আইনে যে গলদ ও সীমাবদ্ধতা ছিল তা দূরীকরণে কাজ করবে এই নতুন আইন- তেমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।  নতুন এই আইনে সব ধরণের সাজা বাড়ানো হয়েছে। সাথে সাথে রাখা হয়েছে কঠোর শাস্তির বিধান। ট্রাক চালক ভাইদেরও এই আলোচিত আইন সম্পর্কে সচেতন হওয়া উচিত। চলুন জেনে নিই এই আইনের উল্লেখযোগ্য ২০টি বিধান।      

 

নতুন আইনের উল্লেখযোগ্য ২০টি বিধান: 

 

  • ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যাতিত মোটরযান চালানো হলে ছয় মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করা হবে।
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বা বাতিল করার পরেও যদি কেউ মোটরযান চালায় তবে তাকে ৩ মাসের কারাদণ্ড, বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। 
  • কর্তৃপক্ষ ব্যতিত ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রস্তুত, প্রদান বা নবায়ন করা হলে  ছয় মাস থেকে দুই বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হবে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। 
  • ড্রাইভিং লাইসেন্স স্থগিত, প্রত্যাহার বা বাতিল করার পরেও যদি কেউ মোটরযান চালায় তাহলে ৩ মাসের কারাদণ্ড অথবা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
  • রেজিস্ট্রেশন ব্যতিত মোটরযান চালানো হলে ৬ মাসের কারাদণ্ড, বা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
  • ফিটনেসবিহীন মোটরযান চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দণ্ডিত করা হবে।
  • রুট পারমিট ছাড়া মোটরযান চালালে ৩ মাস কারাদণ্ড, বা ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। 
  • মোটরযানের বাণিজ্যিক ব্যবহার সংক্রান্ত বিধিনিষেধ অমান্য করলে ৩ মাস কারাদণ্ড, বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে এবং চালকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তন করা হবে। 
  • গনপরিবহণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে ১ মাস কারাদণ্ড, বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে এবং চালকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তন করা হবে। 
  • কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত কোন মোটরযানের কারিগরি বিধিনির্দেশ অমান্য করা হলে ১- ৩ বছরের কারাদণ্ড, বা ৩ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। 
  • ট্রাফিক সাইন বা সংকেত অমান্য করা হলে ১  মাস কারাদণ্ড, বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে এবং চালকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ পয়েন্ট কর্তন করা হবে। 
  • মোটরযানে অতিরিক্ত ওজন বহন করলে ১ বছর কারাদণ্ড, বা ১ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে এবং চালকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ২ পয়েন্ট কর্তন করা হবে।   
  • মোটরযান চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বললে ১ মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। 
  • সঠিক স্থানে মোটর যান পার্কিং না করলে বা নির্ধারিত স্থানে যাত্রী বা পণ্য ওঠানামা না করলে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।
  • মোটরযানের গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত বিধান লঙ্ঘন করলে সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। চালকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ (এক) পয়েন্ট কাটা হবে। 
  • নির্ধারিত শব্দমাত্রার অতিরিক্ত শব্দ বা হর্ন বাজালে সর্বোচ্চ ৩ মাসের কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। চালকের ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত হিসাবে দোষসূচক ১ (এক) পয়েন্ট কাটা হবে।  
  • ইচ্ছাকৃত গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যা করলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
  • বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানো বা প্রতিযোগিতা করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা ৩ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আদালত অর্থদণ্ডের সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে দেয়ার নির্দেশ দিতে পারবে।
  • মোটরযান দুর্ঘটনায় কোন ব্যক্তি গুরুতর আহত বা প্রাণহানি হলে চালকের শাস্তি রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ ৫ বছরের জেল ও সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা।   
  • আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে চালককে ৮ম শ্রেণী পাস এবং চালকের সহকারীকে ৫ম শ্রেণী পাস হতে হবে। আগের আইনে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন প্রয়োজন ছিল না।  

ইতিমধ্যেই কার্যকর হওয়া এই ‘সড়ক পরিবহণ আইন ২০১৮’ বাস্তবায়ন করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল কাজ করে যাচ্ছে। ‘ট্রাক লাগবে’ও তার নিজ জায়গা থেকে পরিবহণ চালক ও মালিক সংশ্লিষ্টদের সচেতন করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে।  

Back to top