ঈদ—এই শব্দটি আমাদের মনে এক অভাবনীয় আনন্দের ছবি আঁকে। প্রিয়জনের সঙ্গে কাটানো সময়, মায়ের হাতে রান্না করা খাবার, ছোটবেলার উঠোনে সময় কাটানো—সবকিছু মিলিয়ে ঈদ মানেই এক অন্যরকম উচ্ছ্বাস। আর এই উচ্ছ্বাস নিয়েই প্রতিবছর লাখো মানুষ ঢাকা ছেড়ে পরিবারে ফিরে যান।
কিন্তু ঈদের আগের কয়েকটা দিন রাজধানীর চেহারা একেবারেই অন্যরকম। রাস্তায় দীর্ঘ যানজট, ভিড় ঠাসা বাস স্ট্যান্ড, টিকিটের জন্য হাহাকার—সবকিছু মিলে যাত্রাটা হয়ে ওঠে ভীষণ চাপের। অনেকে পরিকল্পনা করেও যানবাহনের সংকটে পড়ে যান। তখন ‘যেভাবেই হোক বাড়ি যেতে হবে’—এই মানসিকতা থেকে অনেকেই বেছে নেন বিপজ্জনক পথ।
ট্রাকের পেছনে উঠে বা ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফেরা আমাদের দেশের ঈদের সময়কার একটি সাধারণ দৃশ্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই সাধারণ দৃশ্যটির পেছনে লুকিয়ে আছে মারাত্মক ঝুঁকি।
২০২২ সালে প্রায় ১২ লাখ মানুষ ট্রাক এবং ট্রেনের ছাদে করে বাড়ি গেছেন—যা আগের দুই বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। এই সংখ্যাটা শুধু চিন্তারই নয়, ভয়েরও।
অস্বস্তিকর গাদাগাদি, প্রচণ্ড গরম বা বৃষ্টির ভেতরে ছাদের ওপরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকা, ট্রাক বা ট্রেনের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা, হঠাৎ পড়ে যাওয়া—সব মিলিয়ে এর প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে দাঁড়ায় বিপদের নামান্তর।
২০১৯ সালে ঈদের সময় ৪৪ জন মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন, যার মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই ছিল ট্রাক ও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার। এটা ভাবতেই কষ্ট হয়—একটা উৎসবের যাত্রা কীভাবে মৃত্যুর যাত্রায় পরিণত হয়।
ট্রাক বা ট্রেনের ছাদে চড়ে বাড়ি ফেরা শুধুমাত্র আইন বিরুদ্ধ নয়—এটি চরম পর্যায়ের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা।
এর ফলে হতে পারে:
মাত্র কয়েক ঘণ্টা বা কয়েকশ টাকা বাঁচাতে যদি জীবনটাই হারাতে হয়, তাহলে সেই সিদ্ধান্ত কি সত্যিই বুদ্ধিমানের কাজ?
এই ঈদে আপনার যাত্রা হোক সচেতন এবং নিরাপদ।
ঈদ মানে আনন্দ, ঈদ মানে প্রিয়জনের মুখে হাসি।
কিন্তু সেই হাসির জন্য আপনাকে নিরাপদে পৌঁছাতে হবে। পরিবারের সবাই অপেক্ষা করছে আপনাকে একটিবার জড়িয়ে ধরবে বলে।
এই ঈদে তাড়াহুড়ো নয়—আপনার সচেতনতা হোক আপনার প্রিয়জনদের শান্তির কারণ।
জীবন থাকলে ঈদের আনন্দ থাকবে। তাই এবারের ঈদ যাত্রা হোক নিরাপদ, সুশৃঙ্খল এবং আনন্দময়।