প্রতিবার ঈদ-উল-আযহা আসলেই শহরের অলিগলি, গ্রামের হাটবাজার, মানুষের পরিপূর্ণ এক অন্যরকম চেহারা নেয়। চারদিকে কোরবানির পশুর হাঁকডাক, ক্রেতা-বিক্রেতার দরকষাকষি, আর পরিবারের সদস্যদের ঈদের প্রস্তুতি নিয়ে চলে এক ব্যস্ত সময়। কিন্তু এই পুরো প্রক্রিয়ার একটি নীরব অথচ অপরিহার্য অংশ রয়েছে যা আমাদের চোখের আড়ালেই থেকে যায়। এবং তা হলো ট্রাক চালকদের ভূমিকা। এই নিরবতায় লুকিয়ে থাকে তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম।
ঈদ-উল-আযহাকে কেন্দ্র করে দেশের পরিবহন খাতে একটি ব্যতিক্রমী চাহিদা তৈরি হয়—পশুবাহী ট্রাকের। প্রতি বছর এই সময়ে ট্রাকের চাহিদা হয়ে ওঠে আকাশচুম্বী, কেননা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার কোরবানির পশু পৌঁছে দিতে হয় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। এবং কোরবানির পশু গন্তব্যে পৌঁছানোর দায়িত্বে থাকেন ট্রাক চালকেরা। যেমন,
পশু পরিবহনের নির্ভরযোগ্য বাহক
যেহেতু, কোরবানির পশুর হাটগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পশু আনা হয়ে থাকে যেমন, উত্তরবঙ্গ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দিনাজপুর, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া কিংবা বরিশাল। এই সকল জায়গা থেকে হাজার হাজার গরু, মহিষ, ছাগল কিংবা ভেড়া শহরে পৌঁছায় ট্রাকের পেছনে চেপে। পশু পরিবহনের এই কাজটি কোনো সহজ বিষয় নয়। প্রতিটি যাত্রায় ট্রাকচালকদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়, যা প্রায়ই হয় প্রতিকূল আবহাওয়া, যানজট এবং ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তার মধ্য দিয়ে। এর পাশাপাশি থাকে ঘুমের অভাব, রাস্তার ধকল, এবং প্রতিটি পশুর সুস্থতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বাড়তি চাপ।
চালকদের কাজ কেবল পশু পরিবহনেই শেষ হয় না। অনেক সময় বিক্রেতারা চাহিদা অনুযায়ী হাটে হাটে ট্রাক নিয়ে পশু দেখিয়ে বেড়ান। এর মানে চালকদের দিনরাত হাটের আশপাশে কাটাতে হয়। না ঘুমিয়ে, না খেয়ে, ধুলোবালি আর গরমের মধ্যেই তাদের কাজ চালিয়ে যেতে হয়।
কোরবানির হাট থেকে পশু কিনে আনার সময় আমরা অনেকেই ট্রাক ভাড়া করি। এই সময়টাতেও চালকদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
সবকিছু মিলিয়ে, কোরবানির এই পুরো প্রক্রিয়ার পেছনে যিনি নীরবে কাজ করে যান, তিনি হলেন ট্রাক চালক। তারই দক্ষতা, ধৈর্য, এবং সতর্কতার উপর নির্ভর করে কোরবানির এই বিশাল আয়োজন সফল হয়। পশুপালকদের জন্য তাদের কষ্টে পালন করা পশু ঠিকঠাক সময়ে ও নিরাপদে হাটে পৌঁছানো অত্যন্ত জরুরি। অন্যদিকে, ক্রেতাদের জন্যও সময়মতো পশু হাতে পাওয়া প্রয়োজন, বিশেষ করে যারা শেষ সময়ে কিনে থাকেন।
ভেবে দেখুন, আমরা যখন পরিবার নিয়ে ঈদের প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখন এই ট্রাকচালকেরা হয়ত বাড়ি থেকে অনেক দূরে, একাকী রাস্তায় সময় কাটাচ্ছেন। তাদের ঈদ আয়োজিত হয় দায়িত্ব, পরিশ্রম আর পেশার প্রতি দায়বদ্ধতা দিয়ে। তাদের কষ্টের স্বীকৃতি দেওয়া উচিত, কমপক্ষে একটিবার হলেও মনে রাখা উচিত—এই ঈদের পশু হাট থেকে আমাদের ঘরে পৌঁছাতে যাদের সবচেয়ে বড় অবদান, তারা হচ্ছেন ট্রাকচালকরা।