জেনে নিন কোরবানির পশুর পরিবহন যাত্রাকে আরামদায়ক করার ৪ টি কার্যকরী টিপস

ঈদ-উল-আযহায় পশু কেনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং আনন্দের অংশ হলেও, সেই পশু হাট থেকে বাড়ি পৌঁছানোর যাত্রাটি যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং ও কষ্টকর হয়ে থাকে। এই যাত্রা যদি সঠিকভাবে সম্পন্ন না হয় তবে, ঈদের সৌন্দর্য ব্যাহত হতে পারে। বাংলাদেশে হাট থেকে পশু পরিবহনের সময় অনেকেই এমনভাবে কোরবানির পশু ট্রাকে তুলেন বা দীর্ঘ পথ পাড়ি দেন, যাতে পশুর শারীরিক ও মানসিক কষ্ট হয়।

ইসলামে পশুর প্রতি সদয় হওয়ার কঠোর নির্দেশ আছে। তাই পশুর যাত্রা যেন আরামদায়ক হয়, সেটি নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক ও ধর্মীয় দায়িত্ব। নিচে কিছু কার্যকরী টিপস দেওয়া হলো যেগুলো অনুসরণ করলে পশুর যাত্রা হতে পারে নিরাপদ ও আরামদায়ক। 

১. পশুর ওজন ও সংখ্যার কথা বিবেচনায় রেখে সামঞ্জস্যপূর্ণ ট্রাক নির্বাচন করুন

অনেকেই খরচ বাঁচাতে একটি ছোট পিকআপ ট্রাকে একাধিক পশু গাদাগাদি করে পরিবহন করেন। এর ফলে পশুর শ্বাসকষ্ট হয়, হাঁটাচলার জায়গা না থাকায় তারা আঘাত পায় বা পড়ে যেতে পারে।

টিপস:

  • আগে থেকেই নিশ্চিত করুন যে প্রতিটি পশুর জন্য ট্রাকে এমন পরিমাণ জায়গা রাখা থাকে যেন তারা একে অপরের গায়ে ধাক্কা না খায় বা ঘেঁষে না দাঁড়াতে হয়।
  • একটানা ৪-৫ ঘণ্টার বেশি যাত্রা হলে পশুর বসার মতো জায়গাও রাখার চেষ্টা করুন।
  • ওভারলোড ট্রিপ আইনত নিষিদ্ধ এবং পশুর জন্যও অত্যন্ত কষ্টকর তাই ট্রাক ওভারলোড করা থেকে বিরত থাকুন।

২. খোলা বা পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করে ট্রাক বুক করুন

বাংলাদেশের গরম ও আর্দ্র আবহাওয়ায় কাভার্ড ট্রাকে পরিবহন করলে পশুর শ্বাসকষ্ট বা দমবন্ধ হয়ে  প্রাণহানির আশঙ্কা থাকতে পারে। এছাড়াও, অতিরিক্ত গরমে হিটস্ট্রোক বা পানি শূন্যতাও দেখা দিতে পারে।

টিপস: 

  • খোলা বা হাফ-কাভার্ড ট্রাক ব্যবহার করুন যাতে বাতাস চলাচল করতে পারে।

  • ট্রাকে ত্রিপল ব্যবহার করলে অবশ্যই পাশে খোলা জায়গা রাখুন যাতে বাতাস ঢুকতে পারে। 

৩. পর্যাপ্ত পানি ও খাবারের ব্যবস্থা রাখুন

দীর্ঘ যাত্রার ক্ষেত্রে স্বাভাবিকভাবেই পশু ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কেননা, অনেকে হাট থেকে ৫০-১০০ কিমি দূরের গ্রামের বাড়ি পর্যন্ত ট্রাকে করে পশু নিয়ে যান।

টিপস:

  • পশুর যাত্রার আগে ও পরে পরিষ্কার পানি পান করান।

  • যাত্রার সময় যদি বিরতি নেওয়ার সুযোগ থাকে, কিছু খড় বা ঘাস খাওয়াতে পারেন।

  • গরমের দিন হলে শরীরে হালকা পানি ছিটিয়ে পশুর শরীর ঠান্ডা রাখতে পারেন।

৪. পশু ট্রাকে তোলা ও নামানোর সময় সহানুভূতির পরিচয় দিন

যেকোনো পশুকে হঠাৎ টেনে তুললে বা ধাক্কা দিলে তা তার জন্য কষ্টদায়ক এবং বিপজ্জনক। আর ট্রাকের র‍্যাম্প না থাকলে পশু পা ফসকে পড়ে যেতে পারে।

টিপস:

  • ট্রাকে ওঠানামার জন্য বাঁশ বা কাঠের র‍্যাম্প ব্যবহার করুন।

  • ধৈর্য সহকারে পশুকে উঠান এবং অবশ্যই ভয় দেখাবেন না।

  • প্রয়োজনে অভিজ্ঞ সহায়তা নিন।

 

দীর্ঘ রুটে পশু পরিবহনের ক্ষেত্রে একটানা যাত্রা এড়িয়ে চলা অত্যন্ত জরুরি, কারণ এতে করে পশু অতিরিক্ত ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই, সম্ভব হলে মাঝপথে কিছুক্ষণ বিরতি দেওয়া উচিত, যাতে পশু বিশ্রাম নেয়ার সুযোগ পায়। এছাড়া দিনের বেলা কড়া রোদে যাত্রার বদলে ভোর বা সন্ধ্যায় রওনা হওয়াই উত্তম। মনে রাখবেন, যাত্রাপথে পশুর প্রতি সদয় আচরণ করা শুধু মানবিক নয়, এটি ইসলামের স্পষ্ট নির্দেশনা। কোরবানির পশু শুধুই কেনা বেচার বস্তু নয় বরং, একটি আমানত এবং ত্যাগের প্রতীক। এর দেখভালে অবহেলা করা মানে ঈদ-উল-আযহা এর মূল বার্তাকে অসম্মান করা। আসুন, আমরা সতর্ক হই এবং হাট থেকে বাড়ি পর্যন্ত পশুর যাত্রাকে আরামদায়ক ও নিরাপদ করে তলার পূর্ণ ব্যবস্থা নেই। 





   

Back to top