জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬: বাণিজ্যিক যানের অগ্রিম করের প্রস্তাবিত পরিবর্তন ও ট্রাক মালিকদের জন্য করণীয়


পরিবহন খাতের ব্যয় সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা যেকোনো ব্যবসা বা ব্যক্তির জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই প্রেক্ষাপটে, সম্প্রতি প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২৫-২৬ এ বাণিজ্যিক যানবাহনের উপর ধার্য করা "অ্যাডভান্স ট্যাক্স" বা অগ্রিম করের পরিবর্তনগুলো পরিবহন মালিক ও সংশ্লিষ্টদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই পরিবর্তনগুলো ২০২৫ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে, যা পরিবহন ব্যবস্থার আর্থিক কাঠামোতে একটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে।

যেসব পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে:

২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বাণিজ্যিক যানবাহনের উপর আরোপিত অগ্রিম করে সংশোধনী আনা হয়েছে। নিচে ট্রাক, লরি, ট্যাংক লরি এবং পিকআপ ভ্যানের জন্য প্রাসঙ্গিক কিছু অ্যাডভান্স ট্যাক্সের পূর্বের ও প্রস্তাবিত নতুন হারগুলো তুলনামূলকভাবে উপস্থাপন করা হলো:

যানবাহনের ধরন

পূর্বের অ্যাডভান্স ট্যাক্স (টাকা)

প্রস্তাবিত নতুন অ্যাডভান্স ট্যাক্স (টাকা)

প্রাইম মুভার

২৪,০০০

৩৫,০০০

৫ টনের বেশি পে-লোড ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাক/লরি/ট্যাংক লরি

১৬,০০০

৩০,০০০

দেড় টনের বেশি কিন্তু ৫ টনের কম পে-লোড ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাক/লরি/ট্যাংক লরি

৯,৫০০

১৫,০০০

দেড় টনের কম বা সমান পে-লোড ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাক/লরি/ট্যাংক লরি

৪,০০০

৭,০০০

পিকআপ ভ্যান

৪,০০০

৭,০০০

নতুন কর হার: বিশ্লেষণ ও সম্ভাব্য আর্থিক প্রভাব

প্রস্তাবিত নতুন হারগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রত্যেক ক্যাটাগরিতেই অগ্রিম করে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি প্রস্তাব করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ৫ টনের বেশি পে-লোড ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাকের অগ্রিম ট্যাক্স ১৬,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০,০০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা প্রায় ৮৭.৫% বৃদ্ধি নির্দেশ করে। অর্থাৎ, এই খাতে অগ্রিম কর প্রায় ৮৮% পর্যন্ত বাড়ছে। প্রাইম মুভারের ক্ষেত্রেও অগ্রিম কর ১১,০০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ২৪,০০০ টাকা থেকে ৩৫,০০০ টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।

উল্লেখ্য, কিছু সূত্রে দেড় টনের নিচে ট্রাক এবং পিকআপ ভ্যানের জন্য নতুন হার ৭,৫০০ টাকা বলা হলেও, অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআর কর্মকর্তাদের তথ্যের ভিত্তিতে ৭,০০০ টাকাকেই সর্বাধিক সঠিক হার হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে।

অগ্রিম করের এই বৃদ্ধি সরাসরি পরিবহন খাতের পরিচালন ব্যয়কে প্রভাবিত করবে। 

ট্রাক মালিকদের জন্য করণীয়:

এই প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলোর আলোকে ট্রাক মালিক এবং পরিবহন সংশ্লিষ্টদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য:

  • বাজেট পরিকল্পনায় নতুন হারের প্রভাব বিবেচনা করুন: নতুন হারগুলো কার্যকর হলে ট্রাক পরিচালনার খরচ বেড়ে যাবে। তাই, এই পরিবর্তিত ব্যয়ভার মাথায় রেখে আগেভাগেই বিস্তারিত আর্থিক পরিকল্পনা করে নেওয়া উত্তম।
  • পূর্ণ খরচ মূল্যায়ন করুন: অগ্রিম কর ছাড়াও অন্যান্য খরচ যেমন আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাট ইত্যাদিও সামগ্রিকভাবে বিবেচনায় রাখতে হবে। যদিও অ্যাডভান্স ট্যাক্স বাড়ছে, সরকার গণপরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণে উৎসাহিত করার জন্য ৫৬ আসনের বেশি পাবলিক বাসের আমদানি শুল্ক কমানোর মতো পদক্ষেপও প্রস্তাব করেছে। সমস্ত ব্যয়ের একটি সামগ্রিক চিত্র থাকা অপরিহার্য।
  • দক্ষতা বৃদ্ধি করুন: অতিরিক্ত খরচ মোকাবিলার জন্য রুট অপটিমাইজেশন, গাড়ির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং লোড ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানো এখন আগের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্রস্তাবিত অ্যাডভান্স ট্যাক্সের পরিবর্তনগুলো বাংলাদেশের পরিবহন খাতের জন্য একটি নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে। এই পরিবর্তনগুলোর সাথে মানিয়ে নিতে এবং বাণিজ্যিক কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখতে, ট্রাক মালিকদের সচেতনতা, সময়োপযোগী পরিকল্পনা এবং পরিচালন দক্ষতার উন্নতি সাধন অত্যন্ত জরুরি। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে এবং লাভজনকতা বজায় রাখতে, আপডেটেড তথ্য অনুসরণ করা এবং স্মার্ট লজিস্টিক সমাধান ব্যবহার করা অপরিহার্য।

Back to top