ঈদ-উল-আযহা বিশেষ একটি আনন্দের মুহূর্ত। এমন একটি উৎসব যা কিনা ত্যাগের পবিত্র বার্তা বয়ে আনে। এই দিনে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি লাভের আশায় কোটিরও বেশি পশু কোরবানি দেয়া হয়ে থাকে পুরো দেশজুড়ে। কোরবানির আগে পশুর প্রতি মানবিক এবং নৈতিক দায়িত্ব পালন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তবে, কোরবানির পরের সামাজিক দায়িত্বটি ও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। কোরবানির পর নিজ নিজ শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা আমাদের সবার সম্মিলিত দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে আমরা যদি আগে থেকেই একটু সচেতন থাকি, তাহলে ঈদের আনন্দ হয়ে উঠবে দ্বিগুণ। আসুন প্রথমে জেনে নেই কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব;
কোরবানির বর্জ্য, বিশেষ করে পশুর রক্ত, হাড়, নাড়িভুঁড়ি, চামড়া ইত্যাদি যদি সঠিকভাবে অপসারণ করা না হয়, তবে তা পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক অস্বস্তি এবং হুমকির বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। যেমন,
কোরবানির পর নিজেদের শহর পরিষ্কার রাখতে আমরা প্রত্যেকেই কিছু সহজ কিন্তু কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারি:
সিটি কর্পোরেশন বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নির্ধারিত স্থানে কোরবানি করার চেষ্টা করুন। এতে বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণ প্রক্রিয়া সহজ হয়। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে নিজ বাড়ির আঙিনায় বা নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে কোরবানি করুন যাতে রক্ত ও বর্জ্য ছড়িয়ে না যায়।
কোরবানির পরপরই পশুর রক্ত ও অন্যান্য বর্জ্য পরিষ্কার করে ফেলুন। রক্ত পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন এবং বর্জ্যগুলো পলিথিন ব্যাগে ভরে ভালভাবে আটকে নির্দিষ্ট স্থানে রাখুন। পচনশীল বর্জ্য বেশিক্ষণ ফেলে রাখবেন না।
পশুর সব বর্জ্য (নাড়িভুঁড়ি, হাড়, উচ্ছিষ্ট অংশ) মোটা পলিথিন ব্যাগ বা বস্তায় ভরে মুখ ভালোভাবে বেঁধে রাখুন। খেয়াল রাখবেন যেন ব্যাগ ছিঁড়ে বর্জ্য বাইরে বের হয়ে না আসে। সিটি কর্পোরেশন থেকে সরবরাহকৃত ব্যাগগুলো ব্যবহার করতে পারেন অথবা নিজ উদ্যোগে মজবুত ব্যাগ সংগ্রহ করুন।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কোরবানির বর্জ্য অপসারণের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তাদের হটলাইন নম্বরগুলোতে ফোন করে বর্জ্য অপসারণের জন্য অনুরোধ করুন। তারা আপনার এলাকার নির্দিষ্ট স্থান থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করবে। ঈদের দিন দুপুর থেকেই সাধারণত এই কার্যক্রম শুরু হয়ে থাকে।
কোরবানির স্থান পরিষ্কার করার পর সেখানে ব্লিচিং পাউডার বা অন্যান্য জীবাণুনাশক ছিটিয়ে দিন। এতে দুর্গন্ধ দূর হবে এবং জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি কমবে।
কোরবানির পশুর চামড়া দ্রুত সরিয়ে ফেলুন। এটি দীর্ঘক্ষণ ফেলে রাখলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। চামড়া বিক্রির জন্য নির্দিষ্ট সংগ্রহ কেন্দ্র বা মাদ্রাসায় পৌঁছে দিন।
যারা বর্জ্য সংগ্রহ ও অপসারণের দায়িত্বে আছেন, তাদের কাজে সহযোগিতা করুন। বর্জ্য এমনভাবে রাখুন যেন তাদের পক্ষে তা সংগ্রহ করা সহজ হয়।
আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টাই পারে আমাদের শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখতে। কোরবানির পর নিজ নিজ শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখা কেবল সিটি কর্পোরেশনের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সবার নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। আপনার সামান্য সচেতনতা আর দায়িত্বশীল আচরণই পারে একটি সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন শহর বজায় রাখতে।