[বাসা বদলের চেকলিস্ট] বাসা পরিবর্তনের সময় আপনার করণীয়

বাসা বদলের কথা চিন্তা করলে প্রথমেই যে কথাটা মাথায় আসে তা হল, কত শত ঝামেলায় পরতে হবে বাসা বদলের সময়। এই বাসায় যা কিছু আছে সব কিছু নিয়ে আবার নতুন বাসায় সাজানো, কত কিছুর জন্যে প্রিপারেশন নিতে হবে আগে থেকেই তার হিসাব নেই! এতো কিছুর মধ্যে বাকি থেকে যায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা একদম শেষ মুহূর্তে মনে পড়ে। আর তাই পরতে হয় বিভিন্ন অনাকাংখিত সমস্যায়।

এ ধরনের সমস্যা এবং অন্যান্য ঝামেলার কাজগুলো আরেকটু সহজ করা যায় যদি আগে থেকে সব কাজের একটা লিস্ট দাঁড় করানো যায়। তখন শুধু বাসা বদলের নির্দিষ্ট সময় আগে থেকে সেই চেকলিস্ট দেখে একটা একটা করে কাজগুলি সম্পন্ন করা যায় এবং হঠাৎ অনাকাংক্ষিত কোনো ঝামেলা এড়ানো সহজ হয়। 

তাই আপনার বাসা বদল আরো সহজ করতে, আমরা বাসা বদলের জন্য যা যা করা দরকার সেই কাজগুলিকে বাসা বদলের পূর্বে, বাসা বদলের সময় এবং বাসা বদলের পরে এমন ৩ টি ভাগে ভাগ করেছি। চলুন এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেইঃ

 

বাসা বদলের পূর্বে

 

১। বর্তমান বাসার বাড়িওয়ালাকে জানানো

বাসা বদল এর কথা বাড়িওয়ালাকে জানাতে দেরী করলে অনেক সময় এডভান্স ভাড়ার টাকা কেটে রাখা হয়। তাই বাসা বদল এর চিন্তা করলে অবশ্যই মনে করে ২ মাস আগেই বর্তমান বাড়িওয়ালাকে জানিয়ে রাখুন। 

২। নতুন বাসা কনফার্ম করা

সম্ভব হলে ১-২ মাস আগেই নতুন বাসা কনফার্ম করে ফেলুন। ঢাকা সিটিতে বাসা ভাড়া খুঁজতে কিছু অনলাইন মাধ্যম আছে যাদের সহায়তা নিতে পারেন।

বাসা কনফার্ম হয়ে গেলে বর্তমান এবং নতুন দুই বাসার বাড়িওয়ালাকেই জানিয়ে রাখুন আপনি কত তারিখে এবং কোন সময়ে বাসা বদল করবেন। 

৩। বাসার মালামালের লিস্ট করা

আপনার বাসায় যত ধরনের মালামাল রয়েছে সবকিছুর একটি লিস্ট দাঁড় করিয়ে ফেলুন। আগে থেকে লিস্ট করা থাকলে, আপনার বাসার মালামাল সঠিক ভাবে সাজিয়ে নিতে সুবিধা হবে। 

৪। মুভিং কোম্পানি কনফার্ম করা

বাসা বদলের ঝামেলা কমাতে যদি কোনো মুভিং কোম্পানির সহায়তা প্রয়োজন হয়, সেই ক্ষেত্রে ১ মাস আগেই একটি মুভিং কোম্পানির সার্ভিস কনফার্ম করে রাখুন। অনেক সময় মাসের শেষ মুহূর্তে কনফার্ম করতে গেলে চাহিদা বেশি থাকায় খরচও বেশি পরতে পারে। 

বাসা বদলের পুর্বে এই সম্পর্কিত কিছু জানার থাকলে সরাসরি ট্রাক লাগবের হোম শিফটিং স্পেশালিস্ট এর সাথে যোগাযোগ করে ফ্রি কনসালটেশন সার্ভিস নিতে পারেন, ফ্রি কনসালটেশন সার্ভিসটি নিতে এই ফর্মটি পূরন করুন।

৫। প্যাকিং এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণের ব্যবস্থা করা

কাপড়-চোপড়, বইপত্র সহ অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসই থাকে যা ভালোভাবে প্যাকিং করে নিতে হয়। তাই আগে থেকে প্যাকিং করার জন্য কার্টন, পেপার রোল ইত্যাদি প্রয়োজনীর সামগ্রী কিনে রাখুন। 

অনেক মুভিং কোম্পানিও এ ধরনের প্যাকেজিং এর ব্যবস্থা করে দেয়। এ ক্ষেত্রে তাদেরকে জানালে আগেই তারা প্রয়োজনীয় প্যাকেজিং সামগ্রী পাঠিয়ে দিবে।

৬। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাতিল করা

বেশিরভাগ সময় বাসা বদলের সময় বোঝা যায় যে কত অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বা কাপড়-চোপড় বাসায় ছিল। এই সকল অপ্রয়োজনীয় জিনিস রেখে দিলে শুধু শুধু মালামাল এর পরিমাণ বাড়বে। তাই আগে থেকে অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রগুলি বাতিল বা ভালো অবস্থায় থাকলে কাউকে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে।  

 

৭। নতুন বাসার দরজা এবং সিঁড়ির সঠিক পরিমাপ নিন

নতুন বাসায় উঠার আগেই সেই বাসার দরজা এবং সিঁড়ির পরিমাপ নিয়ে রাখুন, অনেক সময় অপেক্ষাকৃত বড় মালামাল থাকে যা সরু দরজা বা সিঁড়ি দিয়ে বহন করা যায় না। 

তাই আগে থেকে পরিমাপ নেওয়া থাকলে প্ল্যান করে ফেলতে পারবেন আগেই যে কিভাবে মালামাল গুলি বহন করতে হবে।  

৮।  ক্যাবল এবং ইন্টারনেট কোম্পানিকে কনফার্ম করা

নতুন বাসায় যাওয়ার আগেই সেই এলাকার ক্যাবল এবং ইন্টারনেট প্রোভাইডারকে জানিয়ে রাখুন যাতে নতুন বাসায় উঠার পর অপেক্ষা করতে না হয়। 

৯। প্যাকিং শুরু করুন এবং লেবেলিং করে রাখুন

বাসা বদলের কমপক্ষে ৩ দিন আগে থেকে কাপড়-চোপড়, বইপত্র, ডিনার সেট ইত্যাদি জিনিসপত্র আলাদা আলাদা কার্টন এ প্যাকিং করুন। 

আলাদা আলাদা মালামাল এর প্যাকেজিং গুলো  নাম্বারিং করুন এবং কোন বক্সে কি আছে তা মার্ক করে রাখুন। সবগুলো প্যাকেজিং এর লিস্ট করে ফেলুন যেনো শিফটিং এর সময় কোনো বক্স বাকি না থাকে। 

মালামাল গুলি ট্রাকে উঠানোর সময় লেবেলিং দেখে লেবারদের খেয়াল রাখতে বলবেন যেন ভংগুর জিনিস থাকলে সেই বক্স সাবধানে রাখা হয়। 

প্যাকেজিং হয়ে গেলে  কার্টন বা বক্স গুলো ভালোভাবে  স্কচ টেপ বা রশি দিয়ে বেঁধে নিন, এতে করে পরবর্তীতে মালামাল প্যাকেজিং এর নিচ দিয়ে পরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।

১০। মালামাল অনুযায়ী আলাদা প্যাকিং এর ব্যবস্থা করা

ডিনার সেট বা অন্যান্য কাচের জিনিসপত্র আলাদা প্যাকিং এর ব্যবস্থা রাখুন। ভালো হয় যদি প্লাস্টিকের কেস ব্যবস্থা করতে পারেন, অথবা বড় বাকেট এর মধ্যেও কাপড় দিয়ে রাখতে পারেন, যেন ঝাঁকি লাগলে ভাঙ্গার সম্ভাবনা না থাকে। 

ঠিক একইভাবে ক্রোকারিজ আইটেম এবং বাচ্চাদের প্রয়োজনীয়  জিনিসপত্রগুলি আলাদা ভাবে প্যাকেজিং করে রাখুন। যেন পরবর্তীতে নতুন বাসায় খুঁজে পেতে সমস্যা না হয়। 

সকল মালামাল প্যাকেজিং হয়ে গেলে সবকিছু লিস্ট এবং লেবেলিং করা হয়েছে কিনা তা চেক করে নিন।

 

১১। গ্লাস আইটেম আলাদা করে রাখা অথবা নিজে দেখে প্রটেকশনের ব্যবস্থা করে দেওয়া

আলমিরা, শোকেস, গ্লাস টেবিল এরকম যত ধরনের ফার্নিচার এ কাঁচের আয়না বা টেবিল টপ রয়েছে, চেষ্টা করুন নিজের তত্ত্ববধানে সেগুলো আলাদা করে খুলে রাখতে। কেননা অনেক মালামাল এর মধ্যে লেবারগণ সাবধানে কাজ করলেও বেশিরভাগ সময় রাস্তার ঝাঁকুনিতে মালামালের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। 

তাই এধরনের কাঁচজাতীয় মালামাল নিজস্ব তত্ত্বাবধানে নেওয়ার চেষ্টা করুন অথবা ট্রাকে নেওয়ার সময় আলাদা ভাবে প্রটেকশনের ব্যবস্থা আছে কিনা তা কনফার্ম করে নিন।  

 

১২। ফ্রিজের খাবার সময়মত শেষ করুন

রেফ্রিজারেটরে রাখা খাবার বাসা বদলের সময় হতে হতে যেন শেষ হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখুন। এবং বাসা বদলের পূর্ববর্তী দিনেই ভালোভাবে পরিষ্কার করে রাখুন। 

১৩। নতুন বাসায় যে জিনিসগুলির প্রয়োজন হতে পারে

নতুন বাসায় উঠার সাথে সাথে কি কি ধরনের জিনিসপত্র প্রয়োজন হতে পারে তা আগে থেকেই লিস্ট করে রাখুন এবং সেই জিনিসপত্রগুলি আলাদা ভাবে প্যাকিং করে রাখুন। 

১৪। বাসা বদলের দিন কি কি সার্ভিস দরকার তার লিস্ট করুন

অনেক সময় নিজে নিজে বাসা বদল করলে বা মুভিং সার্ভিস প্রোভাইডার সব ধরনের সার্ভিস দিতে না পারলে কিছু সার্ভিস এর জন্যে আগে থেকে ব্যবস্থা করে রাখতে হয়, যেমন- এসি, গিজার সহ অন্যান্য ধরনের ইলেক্ট্রিক সার্ভিস, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বেড বা অন্যান্য ফার্নিচার থাকলে তা খুলে নতুন বাসায় সেট করার সার্ভিস, গ্যাসের লাইন সার্ভিসিং ইত্যাদি সার্ভিস এর প্রয়োজন হয়।

তাই আগে থেকেই এ ধরনের যে সার্ভিসগুলো দরকার তার লিস্ট এবং ফোন নম্বর একটি জায়গায় রাখুন।  এবং বাসা বদলের আগের দিন তাদের কল করে শিডিউল নিশ্চিত করুন।

১৫। সকল ধরনের চাবি বক্সে রাখুন 

বাসায় বিভিন্ন ফার্নিচার এবং ড্রয়ারের অনেক ধরনের চাবি থাকে, সকল ধরনের চাবি একটি বক্সে করে নিজের কাছে রাখুন।

Truck-lagbe-homeshifting-768x512

বাসা বদলের দিন

 

১। আগে থেকে মুভিং কোম্পানির সাথে ফোনে যোগাযোগ করুন

বাসা বদলের দিন সকাল সকাল মুভিং কোম্পানির সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে কনফার্ম হয়ে নিন ট্রাক এবং লেবারগণ সময়মত আসছে কিনা আপনার পিকআপ পয়েন্টে। 

২। মুভারসদের গাইড করুন

ট্রাক এবং লেবারগণ চলে আসলে যেকোনো একজন তাদের সাথে সাথে থাকুন গাইড করার জন্য। কোন মালামাল গুলি আগে ট্রাকে উঠবে এবং কোনগুলি পরে উঠবে তা আগেই তাদের জানিয়ে রাখুন। 

৩। জিনিসপত্র সঠিক ভাবে লোড হচ্ছে কিনা তা চেক করা

লেবারগণ ট্রাকে সঠিক ভাবে মালামাল সাজিয়ে রাখছে কিনা, হালকা জিনিসের উপরে ভারী মালামাল দিচ্ছে কিনা তা খেয়াল রাখুন। ফার্নিচার আইটেমগুলির মধ্যে প্রটেকশনের জন্য কোন সাপোর্ট আছে কিনা অথবা যথেষ্ট দুরুত্ব রাখা হচ্ছে কিনা তা দেখে নিন। 

৪। মালামাল সঠিক স্থানে রাখা

নতুন বাসায় যে মালামাল যেখানে আপনি রাখতে চান, লেবারগণ সেই ভাবে মালামাল নামিয়ে রাখছে কিনা তা খেয়াল রাখুন নতুবা পরবর্তীতে আবার আপনাকে এ কাজে শ্রম দিতে হবে।

৫। করোনাকালীন এই সময়ে নিজের ও পরিবারের সুরক্ষা নিশ্চিত রাখুন

এই সময়ে বাসা বদল করার পূর্বে অবশ্যই পরিবারের সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গুলি নিন। বাসা বদলের দিন সবাই মাস্ক পরে থাকুন এবং হাতের কাছেই হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখুন ।  

৬। নতুন বাসা তাৎক্ষনিক পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা রাখা

নতুন বাসায় লেবারগণ মালামাল রাখার পর যেন দ্রুত সাময়িকভাবে বাসা পরিষ্কার করা হয় সেই ব্যবস্থা রাখুন।  

বর্তমান অবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তার কথা অবশ্যই বিবেচনায় রাখা উচিত, সেক্ষেত্রে ডিসইনফেক্ট সার্ভিস প্রদান করে এমন কোনো কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে রাখতে পারেন নতুন বাসা সম্ভাব্য ভাইরাস মুক্ত রাখতে।  

৭। বাচ্চাদের খাবার, শুকনো খাবার এবং পানির ব্যবস্থা রাখা 

হাতের কাছেই শুকনো খাবার এবং পানির ব্যবস্থা রাখুন। বাসায় ছোট বাচ্চা থাকলে আগে থেকেই তাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা রাখুন। 

 

বাসা বদলের পরে

 

১। বাসা বদলের পরের কাজগুলির লিস্ট করুন

বাসা বদলের পরে আপনার বাসার মালামাল এবং চাহিদা অনুযায়ী কি কি কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে তার একটি লিস্ট করে ফেলুন এবং ধারাবাহিক ভাবে সেই লিস্ট অনুযায়ী একটি একটি করে কাজ সম্পূর্ণ করুন। 

২। প্রাধান্য অনুযায়ী আন-প্যাকিং করুন

যে মালামাল গুলি আপনার আগে প্রয়োজন সেই চাহিদা অনুযায়ী একে একে সবগুলো মালামাল আন-প্যাকিং করুন। 

৩। নতুন বাসা গুছানোর ডেড-লাইন নির্ধারণ করুন

নতুন বাসা কত দিনের মধ্যে আন-প্যাকিংসহ পুরোপুরি গুছিয়ে ফেলবেন তা ঠিক করে ফেলুন। ৩ দিন? ১ সপ্তাহ নাকি আরো বেশি সময়? 

এই ডেড-লাইন আগে থেকে মাথায় না রাখলে দেখা যায় ১ মাস হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ততদিনেও নতুন বাসা গুছিয়ে উঠতে পারেননি। 

৪। বাসা পরিচ্ছন্ন করুন

নতুন বাসায় শিফট করার দিনেই চেষ্টা করুন যতটা সম্ভব পরিচ্ছন্ন করে ফেলার এবং সবকিছু আন-প্যাকিং ও গুছানো হয়ে গেলে আবার ভালোভাবে একবার পরিষ্কার করে ফেলুন। 

বাসা বদলের এই চেকলিস্ট পড়তে আপনার ১০-১৫ মিনিট সময় লাগলেও, ভালোভাবে বাসা বদল সম্পন্ন করতে সময় নিয়ে সঠিক প্ল্যানিং দরকার এবং সেই প্ল্যান অনুযায়ী লম্বা সময় ধরে একটি একটি করে কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করা প্রয়োজন। 

এই চেকলিস্টটি ডাউলোড করে নিন এখান থেকে- বাসা বদলের চেকলিস্ট

আপনাদের বাসা বদলের কাজ কিভাবে ঝামেলা ছাড়া করবেন সে বিষয়ে যেকোনো ধরনের পরামর্শ পেতে এবং আমাদের ফ্রি কাউন্সেলিং সার্ভিস নিতে সরাসরি কল করুন এই নম্বরে- ০১৯৩৯১০০১০০


Back to top