ইলেকট্রিক ভেহিক্যাল নির্মাণের জন্য বিখ্যাত আমেরিকান ভেহিক্যাল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলা নিয়ে এসেছে দুনিয়ার প্রথম টেসলা সাইবার ট্রাক। এর আগে আমরা পেয়েছি ইলেকট্রিক কার, ইলেকট্রিক বাইক আর এবার চলে এলো ইলেকট্রিক পিকআপ ট্রাক। গত ২৩ নভেম্বর ২০১৯ সালে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় টেসলার এই সাইবার ট্রাকটি প্রথমবারের মতো প্রদর্শিত হয়। এরপর থেকেই টেসলার এই ট্রাকটি নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তুমুল আলোচনা। কেমন হয়েছে এই ট্রাক? কিইবা বিশেষ ফিচার বা সুবিধা থাকছে এই ট্রাকে? চলুন জেনে নিই টেসলা ট্রাকের তেমনি ৮টি চমকপ্রদ ফিচার সম্পর্কে।
১) টেসলার এই সাইবার ট্রাকটিতে আপনি পাচ্ছেন অটো পাইলট প্রযুক্তি। মানে ট্রাকটি ড্রাইভার ছাড়াই চলতে পারবে।
২) টেসলা ট্রাকটির সবচেয়ে ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর ফিউচারিস্টিক ডিজাইন। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই টেসলা ট্রাকটি তৈরি করা হয়েছে ভিন্নধর্মী এক নকশায়। সাধারণত একটি ট্রাক তৈরির সময় ভিন্ন ভিন্ন অংশ সংযোজন করে এর বডি তৈরি করা হয়। কিন্তু সাইবার ট্রাকের ক্ষেত্রে পুরো বডি হচ্ছে এক পার্ট! যার ফলে ট্রাকটিকে দূর থেকে দেখলে একখন্ড লোহার খণ্ড মনে হয়।
৩) বিশেষজ্ঞদের মতে, একসময় আমাদের সকল জ্বালানী গাড়ি ইলেকট্রিক গাড়িতে রূপান্তরিত হয়ে যাবে। আমাদের জীবাশ্ম জ্বালানি যেমনঃ গ্যাস, ডিজেল, পেট্রোল ইত্যাদি আস্তে আস্তে ফুরিয়ে যাচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতেই বাজারে এসেছে এই ইলেকট্রিক ভেহিক্যালগুলো। বলা চলে, ভবিষ্যতের গাড়ি হচ্ছে এই ইলেকট্রিক গাড়ি।
৪) এটি ইলেকট্রিক ট্রাক হলেও পেট্রোল ট্রাকের চেয়েও যথেষ্ট শক্তিশালী। খুব সহজেই এটি ফোর্ডের ১৫০ মডেলের ট্রাকটিকে শক্তির বিচারে হারিয়ে দিতে পারে।
৫) এছাড়া গতির দিক দিয়ে এটি পোর্শের সুপারকারকে অনায়াসেই পেছনে ফেলে। স্ট্যান্ডার্ড ভার্সনের সাইবার ট্রাক শুন্য থেকে ৬০ কিমি গতি তুলতে পারে মাত্র ২.৯ সেকেন্ডে যা কেটিএম আরসি ৩৯০ সিসির যে স্পোর্টস বাইকটি রয়েছে তার সমান দ্রুততম। একটি স্পোর্টস বাইকের এরকম গতি তোলা স্বাভাবিক ব্যাপার, তবে হাজার কেজি ওজনের একটি পিকআপ ট্রাকের জন্য এই গতি তোলা বিশাল এক ব্যাপার।
৬) সাইবার ট্রাকের আরেকটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর বুলেটপ্রুফ বডি এবং গ্লাস। গাড়িটি আপনাকে ৯ এমএম বুলেটের হ্যান্ডগান থেকে বাঁচাতে সক্ষম হবে! কেননা গাড়িটিতে ব্যবহার করা হয়েছে ৩ মিলিমিটার স্টেইনলেস স্টিল বডি। এ ধরণের মেটাল ও বডি সাধারণত এরোস্পেস ও রকেট টেকনোলোজিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
৭) এই ট্রাকের আলাদা তিনটি ভার্সন রয়েছে। এই ভার্সন অনুযায়ী দাম ও পারফর্মেন্সও কমবেশি হবে। সবচেয়ে কম মূল্যের সাইবার ট্রাকটির দাম বাংলাদেশী টাকায় ৩৩ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা। কম দামি এই ট্রাকটি শুন্য থেকে ৬০ কিলোমিটার গতি তুলতে সময় লাগে ৬.৫ সেকেন্ড এবং এর সর্বোচ্চ গতি হচ্ছে ১৭৭ কিলোমিটার। এছাড়া দুই মোটরের টেসলা সাইবার ট্রাকের দাম পড়বে বাংলাদেশী টাকায় ৪১ লক্ষ ৭৭ হাজার টাকা। এই ট্রাকটি শুন্য থেকে ৬০ কিলোমিটার গতি তুলতে সময় নেয় ৪.৫ সেকেন্ড এবং এর সর্বোচ্চ গতি হচ্ছে ১৯৩ কিলোমিটার। সবচেয়ে দামী টেসলা ট্রাকটিতে ইঞ্জিন রাখা হয়েছে ৩টি। ট্রাকটি শুন্য থেকে ৬০ কিলোমিটার গতি তুলতে পারে ২.৯ সেকেন্ডে এবং এর সর্বোচ্চ গতি হচ্ছে ২০৯ কিলোমিটার। ট্রাকটির দাম রাখা হয়েছে ৫৮ লক্ষ ৫৪ হাজার টাকা। সবচেয়ে দামী টেসলা ট্রাকটি একবার চার্জ দিলে ৫০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করতে পারবে।
৮) টেসলা ২ লক্ষ ইউনিট সাইবার ট্রাক নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। সাইবার ট্রাক পেতে হলে তাই এখনই আপনাকে বুকিং দিতে হবে। আর একটি সাইবার ট্রাক বুকিং দিতে হলে আপনাকে গুনতে হবে ১০০ ডলার। মজার ব্যাপার হচ্ছে সাইবার ট্রাক প্রদর্শনের ৩৫ ঘণ্টার মধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ ইউনিটের অর্ডার পড়ে গিয়েছে।